
বিশ্ব বাঘ দিবস আজ (২৯ জুলাই)। ‘বাঘ আমার অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাঘের অন্যতম আবাসস্থল সুন্দরবন সংলগ্ন জেলা বাগেরহাটেও দিবসটি উপলক্ষে বন বিভাগ নানা আয়োজন করেছে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। ১৯৮২ সালের জরিপে দেখা যায় বাঘের সংখ্যা ৪২৫টি। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবনের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি, ২০০৪ সালের জরিপে ৪৪০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ২০১৫ সালে ‘ক্যামেরা ট্র্যাকিং’ পদ্ধতিতে পরিচালিত জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছে ১০৬টি। ২০১৮ সালে করা একটি জরিপের ফলাফলে বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি।

অর্থ্যাৎ দেড় যুগের ব্যবধানে ৩২৬টি বাঘ কমেছে সুন্দরবনে। আর কয়েক বছরে বেড়েছে আটটি বাঘ। তবে বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বাড়ছে। সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘ শাবকের দেখা মিলছে বলে জানান সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালিরা।
চলতি বছরের ১২ মার্চ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছিটা কটকা খালে একসঙ্গে চারটি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন পর্যটকরা। তখন তাদের তোলা কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি বনরক্ষীরা কটকা এলাকায় এক সঙ্গে তিনটি বাঘ দেখতে পেয়েছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় শরণখোলা ও মোংলার লোকালয়ে বাঘের দেখা পেয়েছেন স্থানীয়রা। চোরাশিকার বন্ধে স্মার্ট পেট্রোলিং চালুকরণসহ সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাঘের মৃত্যুর বিষয়ে বন বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৪৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে আটটি বাঘের, বিভিন্ন সময় দুষ্কৃতকারীদের হাতে ১৩টি, লোকালয়ে আসায় গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচটি বাঘের। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে মৃত্যু হয়েছে একটি বাঘের। এছাড়া বিভিন্ন সময় চোরা শিকারি কর্তৃক মেরে ফেলা ১৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে র্যাব-৬ ও বন বিভাগ। বন বিভাগের হিসেব অনুযায়ী সর্বশেষ জরিপের পরে অন্তত আটটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কী পরিমাণ বাঘের জন্ম হয়েছে সে তথ্য নেই বন বিভাগের কাছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় বন বিভাগ কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে আমরা সুন্দরবনে টহল জোরদার করেছি, যার ফলে সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের তৎপরতা কমেছে। সর্বশেষ করোনা মহামারিতে টানা দীর্ঘদিন সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ ছিল। তখন সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠেছে। সর্বশেষ গণনায় সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ ছিল। গেল দেড় বছরে সুন্দরবনে যেভাবে বাঘ দেখা গেছে, আশা করছি সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলা প্রবাহ/ সু
