
তাওসিফ মাহমুদ
ভদ্রলোকের দীর্ঘদিন এর পরিশ্রম অবশেষে সার্থক হলো। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞান/ শারীরতত্ত্ব ক্যাটাগরি্তে নোবেল পুরস্কার ধরা দিলো তার হাতে।আর তা হবে না কেনো, আদিমানবের জিনোম সিকোয়েন্স কি আর চাট্টিখানি কথা।

জ্বী, বলছিলাম সুইডিশ জীনতত্ত্ববিদ সোয়ান্তে পাবো (Svante Pääbo) এর কথা। জন্ম ১৯৫৫ সালের ২০ এপ্রিল,সুইডেন এর স্টকহোমে। বাবা-মা উভয়কে দেখেই সম্ভবত গবেষণার নেশাটা নিজের মাথায় জেঁকে বসেছিল তার । সোয়ান্তের মা ছিলেন রসায়নবিদ এবং বাবা প্রাণরসায়নবিদ যিনি নিজেও একই ক্যাটাগরীতে ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
সোয়ান্তে পাবো তার পিএইচডি সম্পন্ন করেন সুইডেনের উপশালা বিশ্ববিদ্যালয়(Uppsala university) থেকে এবং পরবর্তীতে পোস্টডক্টরেট রিসার্চ করেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়
(University of Zürich) এবং আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়( University of California) থেকে।১৯৯০ সালে তিনি জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি জার্মানির লাইপজিগে প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাক্স প্ল্যাংক ইন্সটিটিউট ফর এভুলিউশানারি অ্যানথ্রোপোলজি। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত। জাপানের ইন্সটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক হিসেবেও তিনি কর্মরত আছেন।
জিনতত্ত্ববিদ Pääbo বরাবরই চেষ্টা করেছেন মানব বিবর্তনতত্ত্বকে আরেক ধাপ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এর জন্য দীর্ঘ একটা সময় তাকে কাজ করতে হয়েছে বর্তমান মানুষ অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্সের সাথে এর ঠিক আগের বিলুপ্ত আদি পুরুষ নিয়ানডার্থালদের(হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস) জিনগত যোগসূত্র স্থাপন করা নিয়ে। অবশেষে আধুনিক জিন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে Svante Pääbo এবং তার দল নিয়ানডার্থালদের “জিনোম সিকোয়েন্স” আবিষ্কার করতে সফল হন। এই আবিষ্কারের জন্য নিয়ানডার্থাল এর ফসিল থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ এবং জিন প্রযুক্তি হিসেবে পলিমারেজ চেইন রিয়্যাকশন (PCR) এর দারুণ সমন্বয় ঘটিয়েছে দলটি।
আধুনিক ডিএনএ টেকনোলজির মাধ্যমে আমরা আজ আমাদের পূর্বপুরুষদের জীন এবং তাদের বিবর্তন সম্পর্কে অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারছি এবং এই আবিষ্কার মানব বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে আরো শক্ত ভিত্তি দিয়েছে।আশা করা যায় সুদূর ভবিষ্যতে বিবর্তনত্ত্ব সম্পর্কে আরও এমনকিছু সত্য উদঘাটিত হবে যা চিকিৎসাশাস্ত্র, প্রাণরসায়ন,পরিবেশ বিজ্ঞানসহ অনেক ক্ষেত্রেই গবেষণাকে আরও কয়েক ধাপ সামনে এগিয়ে নিয়ে মানবকল্যাণে ভূমিকা রাখবে।
